সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দর: উত্তরবঙ্গের আকাশদ্বার

 বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর হলো শাহ মখদুম বিমানবন্দর, যা রাজশাহী শহরে অবস্থিত। এটি শুধু রাজশাহী নয়, পুরো উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। শাহ মখদুম (রহ.)-এর নামানুসারে বিমানবন্দরটির নামকরণ করা হয়েছে, যিনি ছিলেন রাজশাহীর একজন প্রখ্যাত সুফি সাধক।



বিমানবন্দরের অবস্থান ও গুরুত্ব:

শাহ মখদুম বিমানবন্দরটি রাজশাহী নগরীর মতিহার থানার মধ্যে অবস্থিত। এটি একটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হলেও, এর গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলার মানুষ এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে থাকেন।


ইতিহাস:

শাহ মখদুম বিমানবন্দর ১৯৫০ সালের দশকে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমদিকে এটি একটি ছোট আকারের রানওয়ে নিয়ে চালু হয়। পরবর্তীতে সরকারিভাবে এর সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAB) কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।


পরিকাঠামো ও সুবিধা:

বর্তমানে শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে ঢাকাচট্টগ্রাম রুটে নিয়মিত যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। বিমানবন্দরে রানওয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ হাজার ফুট, যা মাঝারি আকারের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ চলাচলের উপযোগী।
এছাড়াও এখানে রয়েছে:

  • আধুনিক যাত্রী বিশ্রামাগার

  • নিরাপত্তা ব্যবস্থা

  • চেক-ইন কাউন্টার

  • প্রাথমিক মেডিকেল সুবিধা

  • পার্কিং সুবিধা


ফ্লাইট সেবা ও এয়ারলাইন্স:

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স যেমন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এবং নভোএয়ার রাজশাহী রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে।


ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

শাহ মখদুম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য সরকারিভাবে একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। এর মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক ও পর্যটন সম্ভাবনা আরও প্রসারিত হবে।


শাহ মখদুম বিমানবন্দর শুধু একটি যাতায়াতের মাধ্যম নয়, বরং এটি রাজশাহীর অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং পর্যটন উন্নয়নের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। বিমানবন্দরটির উন্নয়নের মাধ্যমে রাজশাহী আরও আধুনিক ও সম্ভাবনাময় একটি অঞ্চলে পরিণত হবে।


মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

রাজশাহীর স্টার্টআপ ও তরুণ উদ্যোক্তা জগতের গল্প

 বাংলাদেশের নতুন অর্থনীতিতে তরুণ উদ্যোক্তাদের ভূমিকা দিন দিন বাড়ছে, আর রাজশাহী এই পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। রাজশাহীর শিক্ষাব্যবস্থা, প্রযুক্তি সংস্থাপন এবং ক্রিয়েটিভ পরিবেশ তরুণদের নতুন নতুন ব্যবসা শুরু করতে উৎসাহিত করছে। 💡 রাজশাহীর স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো , যেমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কলেজ, তরুণদের উদ্যোক্তা মনোভাব গড়ে তুলছে বিভিন্ন ইনকিউবেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশপের মাধ্যমে। কো-ওয়ার্কিং স্পেস ও প্রযুক্তি হাব বাড়ছে, যেখানে তরুণরা নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করছে। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা , যেমন স্টার্টআপ বাংলাদেশ প্রোগ্রাম, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য মেন্টরশিপ ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করছে। 🌟 সফল উদ্যোক্তাদের গল্প সাইফুর রহমান: রাজশাহী থেকে শুরু করে এখন দেশের বড় অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্মের একজন প্রতিষ্ঠাতা। তার উদ্যোগে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী অনলাইন শিক্ষার সুবিধা পাচ্ছে। মাহমুদা খাতুন: একটি কৃষি প্রযুক্তি স্টার্টআপের মালিক, যাঁর প্রজেক্ট রাজশাহীর কৃষকদের জন্য সুলভ দামে আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করছে। তাহসিন আহমেদ: ই-কমার্স ও...

পদ্মা নদী ও রাজশাহীর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

 পদ্মা নদী বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী এবং রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি, পরিবহন ও জীবনযাত্রার প্রাণস্পন্দন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পদ্মা নদীর প্রবাহ, জলস্তর ও পার্শ্ববর্তী পরিবেশে অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, যা রাজশাহীর মানুষের জীবন ও অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। 🔹 পদ্মা নদীর গুরুত্ব রাজশাহীর জন্য রাজশাহীর কৃষিক্ষেত্র ও মৎস্য সম্পদের প্রধান উৎস পদ্মা নদী। নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে ভরা নদীর পানির কারণে মাটির উর্বরতা বজায় থাকে। পদ্মা নদী যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 🌡️ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পদ্মা নদীর পরিবর্তন বর্ষার সময় বন্যার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ফসলি জমি ও বসতভূমি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি কমে যাচ্ছে, যার ফলে সেচের পানি সংকট দেখা দেয়। নদীর তীরের ক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বহু গ্রাম ও বসত ধ্বংসের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। বৃষ্টিপাতের অস্বাভাবিকতা ও তাপমাত্রার উর্ধ্বগতির কারণে নদীর জৈববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 🏞️ রাজশাহীর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কৃষি উৎপাদনে প্রভাব: বন্যা ও খরা ঘনঘন হওয়ায় ...

রাজশাহীতে স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান চিত্র ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

 রাজশাহী, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা রাজশাহীর স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান অবস্থা, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করব। ✅ বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা চিত্র রাজশাহীতে সরকারি ও বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো ও সেবার মান ক্রমেই উন্নত হচ্ছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রাজশাহী সিটি হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র নারী ও শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছে। ১৯৯৮ সাল থেকে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে, যার আওতায় নগর মাতৃসদন, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। 🏗️ ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা রাজশাহীতে স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে: রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: রাজশাহী মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করে ১,২০০ শয্যার হাসপাতা...

রাজশাহীর কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার

 রাজশাহী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এখানকার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি এবং কৃষি-সম্পর্কিত পণ্য উৎপাদন। বর্ষায় নদীভিত্তিক জলবায়ু, উর্বর মাটি এবং অভিজ্ঞ চাষিদের কারণে রাজশাহী দেশের প্রধান খাদ্যশস্য, ফল এবং তুলার উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। 🌾 রাজশাহীর কৃষি অর্থনীতির গুরুত্ব আম, পেঁপে, আলু, ধান, শাকসবজি রাজশাহীর প্রধান কৃষিপণ্য। বিশেষ করে রাজশাহী আম দেশের ও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা পেয়ে থাকে। তুলা ও বোরো ধান চাষে রাজশাহী দেশের অন্যতম অগ্রগণ্য জেলা। কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ এখানকার অর্থনীতির বড় অংশ। কৃষি শ্রমিক ও কৃষি শিল্পে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। 🤖 আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার রাজশাহীর কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্রমবর্ধমান, যার ফলে উৎপাদনশীলতা ও লাভজনকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে: মেকানাইজেশন: ট্রাক্টর, হারে কাটা যন্ত্র, বীজ বপনের যন্ত্র ইত্যাদি মেশিনের ব্যবহার বেড়েছে। যান্ত্রিক সেচ পদ্ধতির মাধ্যমে পানির অপচয় কমানো হচ্ছে। বীজ ও সার প্রযুক্তি: উন্নতমানের বীজ, বিশেষ করে আমের জাতের উন্নয়ন ও ব্যবহার। পর...

রাজশাহী কলেজ ও শিক্ষা আন্দোলনের পথচলা

 রাজশাহী শহর বাংলা শিক্ষার এক প্রাচীন কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত। বিশেষ করে রাজশাহী কলেজ , যেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১৬ সালে, এই অঞ্চলের শিক্ষার মান ও ভাবনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। রাজশাহী কলেজ শুধু শিক্ষার প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এক সময় শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রদূত হিসেবেও পরিচিত ছিল। প্রতিষ্ঠা ও গুরুত্ব ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী কলেজ ছিল ইংরেজি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার কেন্দ্র। এটি ছিল একমাত্র বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ছাত্রদের শিক্ষার সুযোগ দেয়। কলেজ থেকে বহু বাঙালি বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক জন্ম নিয়েছে। শিক্ষা আন্দোলনে রাজশাহী কলেজের ভূমিকা ১৯২০-৩০ এর দশকে ব্রিটিশ শাসনবিরোধী বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রীর আন্দোলন শুরু হয় রাজশাহী কলেজ থেকে। ছাত্ররা স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন ও শিক্ষা সংস্কারের জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৭ সালের পূর্বেও এখানে জাতীয়তাবাদী ও শিক্ষানুরাগী কার্যক্রম জোরদার ছিল। আধুনিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংস্কার পরবর্তীতে রাজশাহী কলেজের ভিত্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে, যা বা...